নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইরে কেন্দ্রীয় কবরস্থান মাদ্রাসা মেয়র আইভী ভেঙে দিয়েছেন – হেফাজত নেতাদের বক্তব্য যখন সরগরম তখন ওই মাদ্রাসার পরিচালক শিল্পপতি ব্যবসায়ী নেতা আবু আহমেদ সিদ্দিকের দেওয়া বক্তব্যে পুরো বিষয়টি উল্টে যেতে শুরু করেছে।
১৯ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জের গণমাধ্যম কে আবু আহমেদ সিদ্দিকের ওই বক্তব্য প্রকাশ হলে বিষয়টি আলোচিত হয়ে উঠে।
আবু আহমেদ সিদ্দিক বলেন, মেয়র আইভী কোন মাদ্রাসা উচ্ছেদ করেনি। আমরা নিজেরাই সেটা সরিয়ে নিয়ে এসেছি। আমার ব্যক্তিগত জায়গাতে মাদ্রাসা নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন।
সিদ্দিক আরো বলেন, ‘মাসদাইরে যেখানে মাদ্রাসা ছিল সেটা ছিল সিটি করপোরেশনের জায়গার উপরে। তাও কবরস্থানের বেষ্টনীর ভেতরে। সেখানে আধুনিক মসজিদ নির্মাণের সময়ে যেহেতু আমি সভাপতি ছিলাম সেহেতু মেয়রের সঙ্গে বসে একটি আলোচনার মাধ্যমেই মাদ্রাসা সরিয়ে নেওয়া হয়। কোন উচ্ছেদ হয়নি। নানা কারণে পরে আর মাদ্রাসাটি করা হয়নি। সেখানে আমার ৭ শতাংশ জায়গা রয়েছে। আরো কিছু জায়গা প্রয়োজন। আশা করছি ৬ মাসের মধ্যেই মাদ্রাসা আরো বৃহৎ আকারে হবে।
১৮ ফেব্রুয়ারী সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের নেতারা বলেন, মূলত মেয়র নিজেই মাদ্রাসা উচ্ছেদ করে আবু আহমেদ সিদ্দিকের উপর দায় চাপিয়ে দেন। এ শুভকংরের ফাঁদে পড়েই ১০টি বছর নষ্ট হয়েছে কালক্ষেপন হয়েছে। আমরা এতদিন সিদ্দিক সাহেবের উপর আস্থা রেখে ভুল করেছি।
এ নিয়ে মেয়র আইভীর সঙ্গে মাওলানা আবদুল আউয়ালের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে কথোপকথনে ওই মাদ্রাসা ইস্যুও আসে।
সেখানে আবদুল আউয়াল মেয়রকে বলেন, মাসদাইর কবরস্থানে দীর্ঘদিন মাদ্রাসা ছিল, আপনি বানিয়ে দিবেন বলছেন। জবাবে মেয়র আইভী বলেন, হুজুর, ‘আমি যে বানিয়ে দিবো আপনি কি শুনেছেন?। আবদুল আউয়াল বলেন, ‘এ কথা আমার কাছে কয়েকটা লোক বলেছে। তাদের কথা আমি বিশ্বাস করেছি।’
জবাবে আইভী বলেন,: হুজুর শুনেন, আপনি যে এতে বড় একজন আলেম। কান কথা শুনে বিশ্বাস করা কি আপনার উচিত? আপনি কি সভাপতিকে জিজ্ঞাসা করেছেন। সিদ্দিক সাহেব কি আপনাকে কিছু বলেছে? উত্তরে আবদুল আউয়াল বলেন,: সিদ্দিক সাহেব বলে নাই। সিদ্দিক সাহেবের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। সিদ্দিক সাহেবের সহযোগি কয়েকজন ছিল তাদের নাম মনে নাই। উত্তরে আইভী বলেন, ১০ বছর আগের কাহিনী। ১০ বছর আগে ওখানে আমি কিন্তু মসজিদ করে দিয়েছি। মাদ্রাসা কিন্তু ওই অবৈধ জায়গায় থাকার কথা না। কবরস্থানের জায়গায় আমি কিন্তু মাদ্রাসা দিতে পারি না। মাদ্রাসা যখন করা হয় কেউ তখন কিন্তু টাকা নিয়ে পড়ায়। আর কবরস্থানের জায়গায় আমি কিভাবে মাদ্রাসা দিবো। এ নিয়ে শোভন গার্মেন্টেসের মালিক সিদ্দিক কাকার সঙ্গে কথা হয়েছে। ওনি নিজে বলেছে মাদ্রাসার জন্য নিজে জায়গা কিনেছেন ২ শতাংশ নাকি ৩ শতাংশ। জায়গা কিনে ওনি নিজে এ মাদ্রাসা চালাবেন। আপনি না জেনে হুজুর শুধু শুধু আমার উপর কোন অভিযোগ দিবেন না বলে দিলাম। আপনি হুজুর আপনাকে আমি অনেক সম্মান করি। এর মানে কিন্তু এই না আপনি যখন খুশি আমাকে যা ইচ্ছা বলবেন।
এদিকে গণমাধ্যমকে মেয়র আইভী জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনাধীন কেন্দ্রীয় সিটি কবরস্থান, মাসদাইর সংলগ্ন একটি মসজিদ ও অনুমোদনবিহীন একটি মাদ্রাসা ছিল। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মসজিদ ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাথে কয়েক দফা আলোচনা করে নতুনভাবে বৃহৎ আকারে মসজিদ নির্মাণ এবং মাদ্রাসাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তে একমত হন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ০৬/০৫/২০১০খ্রিঃ তারিখে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মাননীয় মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, কাউন্সিলর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ৪ তলা বিশিষ্ট মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিটি কবরস্থান জামে মসজিদটি শুভ উদ্বোধন করেন। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বল্লিত মসজিদের ভিতরে একসাথে ৬ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদটি সুষ্টভাবে পরিচালনার জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জিন, খাদেম, নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেয়া হয়। উল্লেখ্য জামে মসজিদ হওয়ার জন্য জমি ওয়াক্বফ করা অপরিহার্য। সরকারী জায়গায় সরকারের অনুমতি ব্যতীত জামে মসজিদ বানানো শরীয়ত সন্মত নয়। মেয়র মাদ্রাসাটি নিজস্ব অর্থায়নে করার কোন অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি কখনই করেননি।
Discussion about this post