গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতার পর ফের ১৯ ফেব্রুয়ারি শক্রবার জুম্মার নামাজের খুৎবায় অশালীন মন্তব্য করে আবারো উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরের আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থাবে থাকা হেফাজত নেতা ও শহরের রেলওয়ের ডি আইটি মসজিদের ঈমাম মাওলানা আব্দুল আউয়াল ।
এর পূর্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের দুটি মাদরাসায় সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মহানগর ওলামা পরিষদ।
তবে সংবাদ সম্মেলনের সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন ওলামা পরিষদ ওরফে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দরা। সাংবাদিকদের ধারাবাহিক প্রশ্নের জবাবে কখনো ভুল স্বীকার করেছেন আবার কখনো কৌশলে ব্যাকফুটে গেছেন। শেষ পর্যায়ে অনেকটা তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দরা।
১৮ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ভবনে সিনামন রেস্টুরেন্টে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ওলামা পরিষদের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কর্তৃক মাসদাইর কবরস্থান হাফেজীয়া মাদরাসা ও ইয়াতিমখানা উচ্ছ্বেদ, বাগে জান্নাত দাওরায়ে হাদীস মাদরাসার নগ্ন হস্তক্ষেপ ও জনগণের দৃষ্টি মেয়রের অন্যায় অপকর্ম থেকে সরিয়ে অন্য দিকে প্রবাহিত করার অপচেষ্টাসহ চলমান আলোচ্য ইস্যুতে ওলামা পরিষদ ওরফে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দরা এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মহানগর উলামা পরিষদের ও হেফাজতে ইসলামের সভাপতি ফেরদাউসুর রহমান বলেন, ‘আমরা মেয়র আইভীকে ব্যক্তিগতভাবে কোন আক্রমণ করিনি। তার সাথে আমাদের ব্যক্তিগতভাবে কোন শত্রুতা বা বিরোধ নেই। এখানে রাজনীতিক কোন ইস্যু নেই।’
সাংবাদিকরা নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দদের। বাগে জান্নাত মসজিদের ওয়াকফা করা আছে কিনা, পরিত্যাক্ত কবরস্থানে মসজিদ তৈরি করে সিজদা করলে তা ইসলাম সিদ্ধ কিনা, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র আইভীকে ঘায়েল করতে এ ধরনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি। এছাড়া মসজিদের পাশে পার্ক থাকলে জিনার গুনাহ হওয়া নিয়েও বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এভাবে একের পর এক নানা প্রশ্নের মুখে আটকা পড়েন হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দরা।
এতে করে হেফাজতে ইসলামের সভাপতি ফেরদাউসুর রহমান কয়েকবার বলেছেন, সময় শেষ, সবাইকে ধন্যবাদ। কিন্তু প্রশ্নের মুখে সম্মেলনের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। এক পর্যায়ে অনেকটা তড়িঘড়ি করে একইভাবে অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন এই নেতা।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি হারুনুর রশিদ, মহানগর হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর আহসানুল্লাহ, কোষাদক্ষ মুফতি দেলোয়ার হোসেন, মুফতি আনিস আনসারী, মোস্তফা হাবিব, তাইজুল ইসলাম সহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুফতি হারুনুর রশিদ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, সিটি মেয়র নগরীর মাসদাইরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অধীন সিটি কবরস্থান সংলগ্ন হাফেজীয়া মাদরাসা উচ্ছেদ করেছেন এবং চাষাঢ়ায় অবস্থিত বাগে জান্নাত জামে মসজিদ ও দাওরায়ে হাদীস মাদরাসায় হস্তক্ষেপ করছেন। মেয়র মসজিদ ও মাদরাসার কাজ করতে দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উলামা পরিষদ নেতাদের।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে ইতোপূর্বে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন সিটি মেয়র ডা. আইভী। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তেন নাট্যকর্মীদের এক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে সরাসরি কথা বলেন তিনি। সিটি মেয়র বলেন, মাসদাইরে কবরস্থান সংলগ্ন একটি মসজিদ ও অনুমোদনহীন হাফেজিয়া মাদরাসাটি ছিল। ২০১০ সালে মসজিদ ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির লোকজনের সাথে এক বৈঠকে মসজিদটিকে পুনরায় নির্মাণ ও মাদরাসা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ব্যবসায়ী আবু আহমেদ সিদ্দিক স্বেচ্ছায় মাদরাসা সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র স্থাপন করেন। এবং পুনরায় নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট মসজিদটি ২০১৬ সালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বাগে জান্নাত জামে মসজিদের জন্য ১৯৮৪ সালে ২৪০০ বর্গফুট জমি দেয় তৎকালীন পৌরসভা। পরবর্তীতে তিন দফায় ওই মসজিদের জন্য ১৭ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে কেবল মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হলেও মাদরাসা ও দোকান ঘর নির্মাণ করে ৩১ শতাংশ জমি দখল করে রাখা হয়েছে দাবি সিটি কর্পোরেশনের। মেয়র বলছেন, অনুমোদন দেওয়া জমির উপর পাঁচতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। মসজিদের মডেলের একটি চিত্রও গণমাধ্যমের কাছে এসেছে। অথচ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই মসজিদ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে কয়েকটি পক্ষ মাঠে নেমেছে। একদিকে জিউস পুকুর ইস্যুতে হিন্দ্র সম্প্রদায় সহ আওয়ামীলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে। অন্যদিকে মসজিদ ও মাদরাসা ইস্যুতে মাঠে নেমেছে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দরা।
এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ ফেব্রুয়ারী সমাবেশে মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি ফেরদাউসুর রহমান মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘উনি ঘোমটা দিতে চায়না উনি ঘোমটা খুলে বেটা সাজতে চায়।’, ‘কাপড়ডারে তো সুন্দর কইরা ধরে আইসা।’ তিনি আরো বলেছেন, নামাজও পড়েন না, দুই হাতে কতগুলো আংটি আছে, কুরবানীও করেন না। কইরেন না আপনি। আপনার ধর্ম ভাল না লাগলে যানগা অসুবিধা কি?। আপনি যান কিন্তু ধর্ম নিয়ে খেলতে দিব না। ধর্ম ব্যবসা আপনি করেন।’
এমন একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য, মসজিদের মিম্বরে বসে করব রচনার হুমকি, ফের তা ভূল হয়েছে বলে স্বীকার করা আবারো মসজিদের খুৎবায় “লঞ্চের (অশালীন শব্দ) ধইরা আইছি !” সহ নানা আপত্তিকর মন্তব্যের পর শহরের অনেকেই কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন মাওলানা আউয়াল ও তার অনুসারী ওলামা পরিষদের নেতাদের নিয়ে ।
Discussion about this post